ইউসুফ আরমান

জীবনের ব্যর্থতা গুলোকে ভুলানোর জন্য মানুষ সুখের গল্প লিখে যায়। আবার কেউ গল্পের প্রধান চরিত্রকে কষ্ট দিয়ে থাকে। যেখানে একটি সুন্দর শেষ দেওয়া যায় তবুও কেউ কেউ সেটা করে না। গল্পের নায়কের ব্যর্থতাতে অনেক বেশি খুশি হয়। নিজেদের ব্যর্থতায় অতীষ্ঠ প্রায় জীবন বিমুখী সব লেখা লিখে। জীবন থেকে নেওয়া কিছু তিক্ত অংশের অনুভূতি আর সাগরের নোনাজলের চারপাশের বাতাসের অনুভূতি এক হয়ে কলমের কালি দিয়ে বের হবে ডাইরির সাদা কাগজের উপর। জীবনের ব্যর্থতাটুকুই ধরে তুলবে অথবা হঠাৎ মনে পড়া কোন সুখের বা আনন্দের মুহূর্ত লিখে রাখা প্রিয় ডাইরিতে। বছরের পর বছর ডাইরিগুলো জমা পড়বে। কোনটিই সম্পূর্ণভাবে শেষ হবে বা হবে না হয়তো। অসমাপ্ত সেই সব ডাইরিতে সব লেখা সাগর পাড়ে বসে লিখা হবে না। কখনও সন্ধ্যায় কাজ শেষে খানিকটা বিশ্রাম নিয়ে লেখা শুরু। কখনও লিখব মনের সুখে কিংবা দুখে আবার কখনও লিখব না মনের কষ্টে বা আনন্দ উচ্ছ্বাসে।

প্রত্যেকের জীবনে একটি সময় আসে যখন সমস্ত কিছুই নিজের বিরুদ্ধে ঘটতে থাকে এবং চারদিক থেকে হতাশার নাগপাশ আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে রাখে। তবে এ ক্ষেত্রে মানুষকে ধমকে গেলে চলবে না। আমাদের ইতিহাস সাক্ষ্য প্রমাণ করে গেছে যে পৃথিবীতে বহু সংখ্যক বিজ্ঞানী এবং মহামানবরা জীবনে সফল হওয়ার আগে গুরুতরভাবে ব্যর্থ হয়েছেন। তবুও, তারা সাফল্যের পথে এগিয়ে গেছেন এবং শেষ পর্যন্ত তাঁদের দক্ষতার ক্ষেত্রগুলিতে ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেছে।

আত্মবিশ্বাসের অভাবঃ- নিজের দক্ষতার উপর ভরসা এবং বিশ্বাস রাখতে হবে। আত্মবিশ্বাসের অনুভূতিগুলো আমাদের চিন্তা এবং কাজ করতে সহায়তা করে। এটার উপরে নির্ভর করে আমরা জীবনে কতটা সফল হতে পারব। প্রতিদিন প্রতিনিয়ত জীবনে আমরা অনেক চ্যালেঞ্জ এর মুখোমুখি হই। আত্মবিশ্বাসের মাধ্যমে আমরা এই চ্যালেঞ্জগুলোকে মোকাবেলা করতে পারব। কেবলমাত্র আত্মবিশ্বাসের অভাব আমাদেরকে লক্ষ্য অর্জন থেকে পেছনে ফেলে দেয়। এর ফলে আমরা অনেক সুযোগ হারিয়ে ফেলি এবং জীবনের লক্ষ্যের কক্ষপথ থেকে দূরে সরে যায়।

ত্যাগের মানসিকতাঃ- সফলতা অর্জন করতে গেলে অনেক কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি হতে হয়। সফলতা সহজ কোন রাস্তায় পাওয়া যায় না। আপনাকে অবশ্যই কঠিন রাস্তার সম্মুখীন হতে হবে এবং আত্মবিশ্বাসের সাথে তা মোকাবেলা করতে হবে। সেটা করার জন্য যা যা পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন সেগুলো আপনাকে করে যেতে হবে। অর্থাৎ নিজেকে এভাবে প্রস্তুত করুন যে সফলতার জন্য যা কিছু ত্যাগের প্রয়োজন, সেটা করার জন্য আপনি প্রস্তুত। মনে করুন, আপনার একমাস পরে একটি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা আছে এবং আপনি চাইছেন এই পরীক্ষায় আপনাকে সফলতার সাথে উত্তীর্ণ হতে হবে ।

সবাই সফল হতে পারে কি? জীবনে সফলতা পাওয়া সহজ কোনো কাজ নয়। এর পেছনে অনেক সময় এবং অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে হয়। তবেই ব্যর্থতাকে পেছনে ফেলে সাফল্যে পৌঁছানো যায়। মনে রাখা উচিত সফল হতে গেলে ব্যর্থতাকে মেনে নিতে হবে এবং প্রত্যেকটি ব্যর্থতা থেকে আমাদেরকে শিক্ষা নিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে হবে। আমরা প্রতিনিয়ত সফলতার পেছনে ছুটছি। জীবনে আমরা সফল হতে চাই। সেটা হতে পারে আমাদের ব্যক্তিগত জীবন, প্রাতিষ্ঠানিক জীবন, অর্থ উপার্জন অথবা মন দেয়া নেয়ার ক্ষেত্রে। কিন্তু সবাই কি সব ক্ষেত্রে সফল হতে পারে?

ব্যর্থতায় অনুপ্রেরণাঃ- ব্যর্থতা আমার মনোবল কমিয়ে দেয়নি বরং ব্যর্থতা সিঁড়ি অতিক্রম করে আমার সাফল্যের পথ কী ভাবে অর্জন করা যায় তার কথা বরাবর ভাবতে সাহস যুগিয়েছে। তাই ব্যর্থতা সাফল্যের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। ব্যর্থতা পরোক্ষভাবে একটি মানুষের সাফল্যের পথ দেখায়। সে রকম কিছু সফল ব্যক্তি বা সাফল্যের কিছু গল্প যা ব্যর্থতায় নিমজ্জিত জীবনকে প্রকৃতপক্ষে অনুপ্রেরণা দান করে।

জীবনে উন্নতির কোন সীমানা নাই। তাই অযথা আপনার জীবনে লক্ষ্য ঠিক করে উন্নতির সীমানা দেবেন না। এতে আপনি লক্ষ্য অর্জনে সফল হলেও বাস্তবে আপনি ব্যর্থ হবেন। আমাদের মনে রাখা উচিত, জীবনের লক্ষ্য অর্জন মানে সব কাজ শেষ নয়। জীবনের লক্ষ্য পরিবর্তনশীল। জীবনের একেকটি লক্ষ্য একেকটি ধাপ মাত্র। সেটা বুঝে লক্ষ্য স্থির করতে হবে। জীবনের লক্ষ্য মানে অর্জনের শেষ সীমানা নয় বরং জীবন যুদ্ধের শুরু মাত্র।

প্রবাদ
পৃথিবীতে সেইসব মানুষ জীবনে এমন কিছু গুরুত্বপূর্ণ সম্মান অর্জন করেছে , যারা সব আশার আলো নিভে যাওয়ার পরও চেষ্টা চালিয়ে গেছে, ব্যর্থতা তাঁদের গতিকে কখনও স্তিমিত করে দেয়নি।

আপনি একবার ব্যর্থ হয়েছেন বলেই এর অর্থ এই নয় যে আপনি সব কিছুতে ব্যর্থ হবেন। চেষ্টা চালিয়ে যান এবং নিজের ইচ্ছাশক্তিকে ধরে রাখুন সর্বদা। নিজেকে বিশ্বাস করুন, কারণ আপনি যদি তা না করেন, তবে কে করবে?

লেখক:
কলামিস্ট ও সাহিত্যিক
দক্ষিণ সাহিত্যিকাপল্লী
কক্সবাজার
০১৬১৫-৮০৪৩৮৮
yousufarmancox@gmail.com